স্বপ্নের একটা মেসেজ পৃথিবী নিস্তেজ
করিমুল ইসলাম
মোবাইলে একটা এসএমএস এলো। তাকিয়ে দেখি ৫ কোটি টাকার মেসেজ। আমার মন আনন্দে ভরে গেল। ঘর থেকে বাইরে বের হলাম আর চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে বলছি --- সবাই শোনো, দিন বদলে গেছে আমার অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা এসেছে। ঘর থেকে মা বেরিয়ে এসে বললেন --- এত আনন্দের কী আছে? আমার অ্যাকাউন্টেও ৫ কোটি টাকার মেসেজ দিয়েছে। এই যে দেখ মেসেজ, আমি একটু অবাক হলাম! ভাবলাম পাড়ার সবাইকে গিয়ে বলি। অথচ পাড়ার লোকেরাও আমাকে বলছে - বেশি উত্তেজিত হওয়ায় কী আছে? আমাদের অ্যাকাউন্টেও ৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে। হঠাৎ যেন আমার আনন্দটা উবে গেল।
তবুও ভাবলাম যাই, বাজারে গিয়ে কিছু মিষ্টি নিয়ে আসি। বাজারে গিয়ে দেখালাম সব দোকান বন্ধ। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম - ও দাদা এই মিষ্টির দোকান বন্ধ কেন ? সে বলল --- মিষ্টির দোকানদারের আর দোকানদারি করার কি দরকার।তার অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা এসেছে। ভাবলাম একটু মার্কেটে যাই।সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসি। কিন্তু এ কি! সেখানেও কোন দোকান খোলা নেই। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। ভাবলাম এখানে তো দোকান বন্ধ। সামনের দিকে যাই, ভালো কোনো হোটেল পেলে তৃপ্তিভরে খাওয়া যাবে। কিন্তু সামনে যতোই যাই দেখি সবই ফাঁকা হোটেলের বাইরে থাকা স্বাগতম জানানোর সেই লোক ও নেই। শপিং মলের সিকিউরিটি গার্ড ও নেই।
সবজি ওয়ালা , চা ওয়ালা কেউই নেই। সব কিছুই বন্ধ। সবার অ্যাকাউন্টে নাকি ৫ কোটি টাকা এসেছে। ৫ কোটি টাকা তোলার জন্য এখন সকলের গন্তব্য কেবলমাত্র ব্যাংকের দিকে।এখন কারোই কাজ করার প্রয়োজন নেই। কারণ সবার কাছেই এখন ৫ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যেই আমার এক বন্ধু ফোন করে বলল - আমি আমার জবটা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমার কাছে এখন ৫ কোটি টাকা আছে। আমার আর এক বন্ধু টিউশন পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। ইফাত আর চাকরির খোঁজা করে না। শ্রমিকরা আর কলকারখানায় যায় না। সব বন্ধ সবাই এখন বড় লোক। বিকেলে মাঠের দিকে গেলাম সেখানেও ফাঁকা সবাই কাজ ফেলে বাড়ি চলে গেছে ।এখন আর তাদের রোদে জ্বলে পুঁড়ে কাজ করতে হবে না।
এমন কি হাসপাতালে ডাক্তাররা বসে আড্ডা দিচ্ছে। তারাও আর চিকিৎসা করবে না। কারণ সাড়া জীবনের জন্য ৫ কোটি টাকাই যথেষ্ট। এক সপ্তাহ পরে দেখা গেল খিদের জ্বালায় লোক কাঁদছে। কারণ জমি থেকে কেউ ফসল তুলছে না। সমস্ত দোকান বন্ধ, হোটেল, মেডিক্যাল সব বন্ধ। অসুস্থ হয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অন্য দিকে পশু - পাখিরা না খেয়ে মরছে। জমিতে সবুজ ঘাস নেই, সোনালী ফসল নেই। শিশুরাও খিদের জ্বালায় কাঁদছে। কারণ গোয়ালা আর দুধ দিচ্ছে না। লোকজন রাস্তায় রাস্তায় পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে ঘুরছে। কাঁদছে আর বলছে ---
--- ' এই নাও ভাই ' ১০ লাখ টাকা দিলাম, আমাকে ১০০ গ্রাম দুধ দাও। ১০ দিন বাদে না খেয়ে আরও মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু কিছু লোক টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে রাস্তায় রাস্তায় আর বলছে ---
--- ' এই নাও ভাই ৫০ লাখ টাকা আমাকে ১০ কেজি চাল দাও ' ।
চারিদিকে কেবল মৃত্যুর ছবি। নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে আমিও ৫ কোটি টাকা নিয়ে ক্রমাগত ছুটে চলেছি। আর বলছি ---
" নাও ভাই পুরো ৫ কোটি টাকা নিয়ে নাও,
তবুও আমাকে কিছু খাবার দাও "।
কে কার টাকা নিবে ? সবার কাছেই তো ব্যাগ ভর্তি টাকা রয়েছে। কিন্তু কারো কাছেই খাবার নেই। মানুষ মানুষের দিকে অগ্রসর হচ্ছে হিংস্র পশুর ন্যায় তেড়ে আসছে। এই বুঝি মানুষ মানুষকে খাবে। অচেনা একজন লোক আমাকে তাড়া করছে। আমি রকেটের ন্যায় ছুটছি। ক্ষুধার্ত মানুষ কতটা আর ছুটতে পারি? হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। মা মা বলে চিৎকার করে উঠলাম। তখনই পাশের রুম থেকে মা ছুটে এসে বলল ---
--- কী রে ! কী হলো? সকাল হয়ে গেছে ঘুম থেকে ওঠ।
বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিস কী জন্য, কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছিলি বুঝি? এতক্ষণ স্বপ্ন ছিল। সেটা বুঝতে পেরে আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম --- না মা খারাপ নয়, ভালো স্বপ্ন। সবার হাতে অনেক টাকা থাকার চেয়ে, আমাদের এই অভাবের দিনগুলো অনেক ভালো। প্রত্যেকটি দিন আমাদের আনন্দময়। আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু আমাদের ঘর আছে, ঘরে দু - মুঠো ভাত আছে। খাবারের সাথে জল আছে, উঠানে শিশুরা খেলছে, মাঠে গরু ঘাস খাচ্ছে, দোকান বাজারে মানুষজনের ভিড়, রাস্তায় গাড়ি চলছে, চারিদিকে পরিবেশটি আনন্দে ভরপুর করে রেখেছে। স্রষ্টার কি অপরূপ সৃষ্টি যে যতটুকু যোগ্য তাকে ততটুকু দিয়ে রেখেছেন।
No comments:
Post a Comment